• বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন |

ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে ঘরছাড়া মা–বাবা

সিসি নিউজ।। ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেই হত্যাকান্ডকে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা। এদিকে ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের আশায় প্রায় ছয়মাস ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হতভাগ্য মা-বাবা। কিন্তু কোথাও সুবিচার পাচ্ছেন না। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও সেই মামলা নেননি পুলিশ-এমন অভিযোগ করেছে স্বজনরা।

অপরদিকে ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে নিজেদের জীবনই এখন হুমকির মুখে। প্রাণে বাচতে এখন বর্তমান তারা বাড়ি-ঘর ছাড়া। এমন অভিযোগ নীলফামারী জেলা সদরের সংগলসী ইউয়িনের কাজিরহাট বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা বাবা সেকেন্দার আলী ও মা রেখা বেগমের। নিহত ছেলের নাম আব্দুর রহিম আকাশ (১৬)। সে স্থানীয় সোনারায় সংগলশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্র। বুধবার রাতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন ওই মা-বাবা। এ সময় তাদের বুকফাটা কান্নায় সেখানে এক হ্নদয়-বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের কান্নায় আশেপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

ভুক্তভোগী বাবা সেকেন্দার আলী বলেন, আব্দুর রহিম আকাশ আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮ টার দিকে আমার সামনেই মটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আমার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ওমর ফারুক ও একই এলাকার মোকছেদ আলী চেন্টু ছেলে সাজু স্থানীয় বারুনী মেলা দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর ওমর ফারুক একাই ফিরে আসায় তাকে ছেলে আকাশের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে আকাশ কোথায় তা আমি জানিনা, হয়ত কোনো বন্ধুর বাড়িতে গেছে। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার।

তিনি বলেন, এর দুইদিন পর আমরা জানতে পারি ঘটনার ওইদিন সংগলশী ইউনিয়নের বান্নিরডাঙ্গা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়া একজন মারা যায়। পরে ওই এলাকায় গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে নিহতের বিবরণ ও ছবি দেখে অনেকটা নিশ্চিত হই সে আমার ছেলে আকাশ। এরপর সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি রেলওয়ে পুলিশ তাকে স্থানীয় হাতিখানা কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। পরে আমার বড় ছেলে ইউপি সদস্য নূর ইসলাম ও ওমর ফারুক আমাকে ভয় দেখিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সৈয়দপুর পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতির মাধ্যমে হাতিখানা কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে গ্রামে দাফন করেন। আমার ছেলে ওমর ফারুকের কথাবর্তা ও আচরণে মনে হয় সে আমার ছেলে আকাশকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর রেখে আসে।

ডুকরে কেঁদে কেঁদে মা রেখা বেগম বলেন, আমার সতীনের নেশাগ্রস্থ ছেলে ওমর ফারুক আমাদের ওপর নানা রকম অত্যাচার করত। আমার দুই ছেলের মধ্যে আকাশ ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সে বলত আমি পড়লেখা শেষ চাকুরী করে তোমার সব কস্ট দূর করব। কিন্তু ওমর আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। ঘটনার দিনও আকাশকে মাদকাসক্ত ফারুক মটরসাইকেলে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন সে বলছে আকাশ আত্মহত্যা করেছে। আকাশ যদি আত্মহত্যাই করবে তাহলে লাশ যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে অনেক দূরে কলা বাগান থেকে তার জুতা পাওয়া গেল কিভাবে। তাই আমার সন্দেহ ওমরই আকাশকে হত্যা করেছে।

রেখা বেগম আরও বলেন, আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে ওমর ফারুকের নামে হত্যা মামলা করতে গেলে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা তা গ্রহণ করেননি। পরে বাধ্য হয়ে আদলতের পরামর্শে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আদালতে মামলা করি। তবে এ মামলা করায় ওমর ফারুক ও নুর ইসলাম আমার স্বামীসহ আমাকে আমার আরেক ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তাদের ভয়ে আমরা এখন ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে উল্লেখিত বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

তবে হত্যাকান্ডের বিষয়টি অস্বীকার করেন রেখা বেগমের বড় সতীনের ছেলে ইউপি সদস্য নুর ইসলাম। তিনি জানান, সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আকাশ বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদেরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার সৎমা।

এ বিষয়ে কথা হয় হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় ৪৮ ঘন্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে খোজ পাওয়ায় স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। যার তদন্ত চলমান।

তবে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিউল আজম বলেন, পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে। ২/১ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

আর্কাইভ