• শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:০০ অপরাহ্ন |

বিমানে উঠতে ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করেন শিশু মানিক

সিসি নিউজ।। বিমান আকাশে উড়ে, বিমানে মানুষ চড়ে। মানুষও আকাশে উড়ে। এমন চিন্তা শিশু মানিকের মনে ঘুরপাক বহুদিনের। তাই বিমানে উঠে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখেন শিশু মানিক মিয়া (১০)। স্বপ্ন পূরণের জন্য জমান ১৫০ টাকা। সেই টাকা খরচ করে রংপুর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যান। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ঢুকে পড়েন ভিআইপি লাউঞ্জে। কিন্তু বিমানে উঠা হয়নি তাঁর। ভিআইপি লাউঞ্চে আটকে দেয় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় সৈয়দপুর বিমানবন্ধরে ঘটনাটি ঘটে।
মানিক মিয়ার বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেওডোবা এলাকা। সে নগরীর হাজী তমিজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের পাশের একটি ফার্নিচারের দোকানে বিদ্যালয় ছুটির পর কাজ করে সে। গতকাল স্কুল বন্ধ থাকায় সে বাড়িতে ছিল। এরপর বিকেল চারটার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন।
গতকাল সোমবার মানিক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন শতক জমির ওপর একটি টিনে ঘর। ঘরের সামনে চুলাতে রান্না বসিয়েছেন তাঁর দাদী। সেখানে বসে আছেন মানিক মিয়া। তাকে ঘিরে প্রতিবেশিদের জটলা। মানিক তাদের শোনাচ্ছিলেন ভিআইপি লাউজ্ঞে পৌছানোর গল্প।
এ সময় মানিক মিয়া জানান, আসরের আজানের পর বাড়ি থেকে বের হয় মানিক মিয়া। ১০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসেন। এরপর সেখানে বাস না পাওয়ায় আরও ১০ টাকা দিয়ে মেডিকেল মোড় পৌঁছান। সেখানে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাস করে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে যান। সেখান থেকে ৫০ টাকায় একটি রিকশা ভাড়া করে বিমানবন্ধরে যান। সেখানে দুজন যাত্রীর পেছন নিয়ে ভিআইপ লাউঞ্জে পৌছান।
মানিক বলে, ‘আমার অনেক দিনের শখ বিমানে উঠার। মানুষ নিয়ে বিমান কিভাবে আকাশে উড়ে তা দেখার। সে জন্য বিমানবন্দরে গেছি। বাইর থেকে ঘুরে দেখছি ভেতরে ঢোকা যাবে না। এরপর ভিআইপ গেট দিয়া ভেতরে ঢুকছি। আমাকে কোনো সিকিউরিটি গার্ড আনসার কেউ বাধা দেয়নি। ভেতের ঢুকে বসেছিলাম। এরপর একজন অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবা করে। আমি ঠিকানা বলি, তাঁরা কাউন্সিলরকে ফোন দেয়, কাউন্সিলর বাবা মাকে বললে আমাকে নিয়ে আসে। আমি বিমানে উঠতে পারিনি। আমার স্বপ্ন আমি বিমানের পাইলট হব।’
প্রতিবেশি ও পরিবারের লোকজন জানান, তিন ভাই বোনের মধ্যে মানিক সবার ছোট। পাঁচ মাস বয়সে তাকে রেখে মা অন্যত্র চলে যায়। বাবা মিঠু মিয়া পেশায় অটো চালক। বাবার একার আয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় মানিক শহরের একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন। সেই দোকান মালিক তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। মানিক ছোট বেলা থেকেই চঞ্চল প্রকৃতির।
মানিকের বাবা মিঠু মিয়া জানান, আকাশে বিমান উড়লে তা দেখতে ছোট বেলা থেকেই ঘর থেকে ছুটে যান মানিক। তাঁর খুব ইচ্ছে বিমান চড়ার। সে প্রায় রাতেই আমাকে বলে-একদিন বিমানে উঠবে। বিমান উড়াবে সে। মিঠু মিয়া বলেন, অভাবের তকনে ছাওয়াটাক মাইনসের দোকানোত থুছু। তায় স্কুলোত ভর্তি করি দিছে। কাল সেই মহাজনের সাথে ঢাকা যাবার কথা কয় বাড়ি থাকি বের হয়। রাইতোত শুনি ঢাকা নোয়ায় বিমান উঠার জন্যে সৈয়দপুর গেইছে। পরে রাত ১১টার সময় বাড়ি নিয়া আসি।
মানিকের মহাজন এ এন্ড জেড ডোরস সিস্টেমের মালিক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘মানিক অত্যন্ত ভালো ছেলে। তাঁর মা নেই। আমিও নিজে এতিম। তাই তাকে আমার কাছে রেখে লেখাপড়া করাচ্ছি। সে বিদ্যালয় ছুটির পর আমার ফার্নিচারের দোকানে দেখাশোনা করেন। প্রায় আমাকে বিমানে উঠার কথা বলত সে।’
হাজী তমিজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানারা বেগম বলেন, মানিক আমার বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল আসার পর বিমানবন্দরে যাওয়ার ঘটনাটি শুনেছি। মানিকের মা নেই, কেয়ার করার মতো কেউ নেই। তাকে অনুকূল পরিবেশ ও আর্থিক সহায়তা করলেও সে ভালো কিছু করবে।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে প্রটোকলে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিতে নিরাপত্তা বেষ্টনীভেদ করে ভিআইপি লাউঞ্জে ওই শিশুর অনুপ্রবেশের বিষয়টি জেনেছি। এটা সিভিল অ্যাভিয়েশনের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। এ বিষয়ে তারা যে সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর নয়-দশ বছরের এক শিশু ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। পরে তাকে জিম্মায় নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে কর্তৃপক্ষ। সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত ছিল সেই ঘটনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

আর্কাইভ