সিসি নিউজ।। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে ঘুর্ণিঝড়ে ১০ গ্রামের ছয় শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রবিবার সকালের এ ঘটনায় ভেঙে ও উপরে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। ঘরের চালা ও গাছের ডালে চাপা পড়ে নারী-শিশুসহ আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন। আহতদের মধ্যে একজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পাঁচ জনকে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬০ জনকে।
গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জোনাব আলী জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে ঘুর্ণিঝড় শুরু হয়। মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া, মাঝাপাড়া, পুরান টেপা, নয়া টেপা, ডিসির মোড়, উত্তরপাড়া, মাঝাপাড়াসহ প্রায় ১০টি গ্রাম তছনছ হয়। ওই ঝড়ে ছয় শতাধিক কাচা ও আধাপাকা ঘড়বাড়ি, অসংখ্য গাছ ভেঙ্গে ও উপরে পড়েছে। বিদ্যুতের তাঁর ছিড়ে ও খুটি উপরে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় গাছ ও ঘরের চালা পড়ে বন্ধ হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ইউনিয়নের ডিসির মোড় গ্রামের লিটন ইসলাম (৪০) বলেন,‘নিমিষের মধ্যে ঝড়ে আমার আধাপাকা ঘরের টিনের চাল উড়ে নিয়ে যায়। এসময় প্রবল বাতাসে পাকা ঘরের দেওয়ার ফেটে যায়’। কাচা এবং আধাপাকাসহ তার পঁচটি ঘর ভেঙে পড়ে বলে বলে জানান।
একই গ্রামের আনারুল ইসলাম (৫৫) বলেন,‘কিছু বুঝে উঠার আগে ঝড়ে আমার তিনটি ঘরের চাল উড়ে যায়। এখন পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছি’।
বানিয়াপাড়া গামের আইরিন বেগম (৩৫) বলেন,‘ঝড়ে আমার বাড়ির চারটি ঘর ভেঙে যায়। এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছি। এ ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে বুঝতে পারছি না’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লোকমান আলম বলেন, ‘ঝড়ের কারণে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে’।
তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম আলু, ১০ হেক্টর জমিতে আগাম ফুলকপি ও দুই হেক্টর জমিতে মূলা চাষ করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মূলা ক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফুলকপি ও আলুক্ষেত বেশি দিন পানিতে ডুবে থাকলে ক্ষতি হবে।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যে সকল সড়কে গাছ উপরে পড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল সে সব গাছ স্থানীয়দের সহায়তায় সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে’।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, ‘উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক থেকে দেড় মিনিটের ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ পালা উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতের খুটি উপরে পড়ে ও তার ছিড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প কাজ করছে। এপর্যন্ত ৬০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। টিন ও গাছের ডাল ভেঙে আহত হওয়া ৫০ জনকে টিটেনাস ইনজেকশন প্রদান করা হয়েছে। গুরুত্বর একজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পাঁচজনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে’।
তিনি জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, এলজিইডি দপ্তর, দমকল বাহিনীসহ সরকারি বেসরকারি সকল দপ্তর মিলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ চলছে। প্রাণি সম্পদ দপ্তর বেশ কিছু গবাদী পশুর চিকিৎসা দিয়েছে। তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। দুই হাজার মানুষের জন্য খিচুরি বিতরণ করা হয়েছে। শুকনা খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে। পরিবারগুলোর পূর্ণবাসনে মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা, ৩৩৮ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০০ কম্বল দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কাজ চলছে। তালিকা চুরান্ত হলে যার যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী পূর্ণবাসনে কাজ করা হবে’।