রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা খাদ্য গোডাউনে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ধান নিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কে চাপ সৃষ্টি করলে তিনি ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসেন। পরে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের হস্তক্ষেপে ওসি মো. আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ খাদ্য গোডাউনে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ইউএনওর নির্দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ধানগুলো ফেরত পাঠানো হয়। পাশাপাশি খাদ্য গোডাউনে বস্তাভর্তি খামালকৃত ধানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক মিটার পাশ হওয়া কৃষকদের ধানগুলো রেখে বাকী ধানগুলো আজ বিকাল ৫টার মধ্যে গোডাউন চত্বর থেকে সরানোর মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেন ইউএনও। এ ঘটনায় যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোডাউন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে অত্র উপজেলায় সরকারিভাবে ২২টাকা কেজি দরে ২৩০ মে. টন ধান ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ আসার পর কয়েকদফা ধান ক্রয়ের জন্য তারিখ নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে তা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। অবশেষে ৩য় দফায় গত ২১ সেপ্টেম্বর হতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভিত্তিক ধান ক্রয়ের জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়-সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত ২/৩ দিন ধরে খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফাকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের ধান নেয়ার জন্য অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এরই সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ব্যবসায়ীরা তাদের ধান ক্রয় করার জন্য ওসিএলএসডিকে পুনরায় চাপ সৃষ্টি করলে এক পর্যায়ে তিনি নিরুপায় হয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের নিকট শরনাপন্ন হন এবং বিষয়গুলো তাকে অবহিত করেন। সরজমিনে ইউএনও খাদ্য গুদামে প্রবেশ করে দেখতে পান গোডাউনের চর্তুদিকে শত শত বস্তা ভর্তি ধান খামাল দিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাৎক্ষণিকভাবে খামালগুলোতে গিয়ে তিনি মালিক খুঁজতে থাকলে কিছু কিছু ব্যবসায়ী গোডাউন থেকে গা ঢাকা দেয়। এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ম বর্হিভূতভাবে কোন ধরণের চাপে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাথানত না করতে বলেছেন এবং প্রকৃত কৃষকদের তালিকা পূর্বক মিটার পাশ ধান ক্রয় করার জন্য নির্দেশনা দেন। কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তিনি এখন থেকে মনিটরিং করবেন এবং গেটের বাইরে মিটার পাশ ও প্রকৃত কৃষকদের তালিকা থাকলে সেগুলো ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আর যে কোন ধরণের চাপ থাকলে সেগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। এ বিষয়ে রাজারহাট খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফার সঙ্গে ০১৭২২৪১৬৫২৯ নম্বরের তার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার ২৩০ মে. টনের বিপরীতে মাত্র ৫৬.৪৮০ মে. টন ধান করা হয়েছে। এর আগে আমার উপর বেশ চাপ ছিল। এখন থেকে আর কোন চাপ এলে তা আইনগতভাবে মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে মিটার পাশ ধান পেলে তা ক্রয় করা হবে। আর ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়।