• বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০ পূর্বাহ্ন |

চামড়ার দর পতনে বিপাকে এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ

সিসি নিউজ।। গত কয়েক বছরের মতো এবারেও কোরবানি ঈদে চামড়ার দর পতনে ঘটনা ঘটেছে। এতে নীলফামারীর এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসা কর্তৃক পরিচালিত লিল্লাহ বোডিংগুলো কর্তৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা এখন এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোডিংগুলো পরিচালনা করতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির পর পশু চামড়াগুলো মূলতঃ বিভিন্ন স্থানীয় মসজিদ, এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিগুলোতে দেয়া হয়। আর এসব সংগৃহিত চামড়া বিক্রির অর্থে এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোডিংয়ে দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের খাবার যোগান হয়ে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরের মতো এবারের চামড়ার দাম না থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

কারণ এবারে কোরবানিতে পাওয়া চামড়া পানির দামে বিক্রি করে যে অর্থ মিলবে তাতে ওই সব দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের এক মাসের খাবারও যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না।

এ নিয়ে আজ শনিবার সৈয়দপুর শহরের কাজীপাড়ায় অবস্থিত আল জামিয়াতুল আবারিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ আবুল কালাম কাশেমী জানান, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিংয়ে আট শ’ শিক্ষার্থী ইসলাম শিক্ষা গ্রহন করছেন। তারা সবাই আবাসিক শিক্ষার্থী। এবারের কোরবানির ঈদে মাদ্রাসা ফান্ডে ৪৮১টি গরুর চামড়া পাওয়া গেছে। এসব বিক্রি করে মিলেছে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৯০ টাকা। আর কয়েক শ’ছাগলের চামড়া মিললেও সেসব চামড়া ব্যবসায়ীরা নিতে অনীহা প্রকাশ করায় চরম বেকায়দায় পড়েছি। সেসব ছাগলের চামড়া গত দুই দিন যাবৎ মাদ্রাসা বারান্দায় পড়ে আছে। সে সব থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর গরুর বিক্রির যে অর্থ মিলেছে তা দিয়ে মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিংয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের এক-দেড় মাসেরও খাবার চালানো যাবে না। বছরের বাকি মাসগুলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কিভাবে খাবার দিবেন তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা।

নীলফামারী শহরের বড় মসজিদ হাফেজিয়া লিল্লাহ বোডিং ও এতিমখানার মুহতামিম হাফেজ মো. মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, প্রতি বছর এলাকার মানুষজন কয়েক শত কোরবানি পশুর চামড়া মাদ্রাসায় দিয়ে থাকেন। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এবারের ঈদ-উল-আজহায়ও মাদরাসা লিল্লাহ বোডিংয়ে ফান্ডে গরুর ও ছাগলের চামড়া মিলেছে। কিন্তু চামড়ার দাম না থাকায় এবারে মাদরাসার ফান্ডে প্রাপ্ত চামড়া বিক্রি অর্থে এক মাসের খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। একই কথা বললেন, ডিমলা উপজেলা শহরের হাফিজিয়া নুরানী এতিমখানার পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

নীলফামারী জেলার প্রতিষ্ঠিত চামড়া ব্যবসায়ী মো. আজিজুল হক বলেন, এবারে গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত এবং ছাগলের চামড়া ১০ টাকা পর্যন্ত কিনেছি। তিনি বলেন, আমরা বংশপম্পরায় এ চামড়া ব্যবসার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ঈদ-উল-আযহা এলে আর বসে থাকতে পারি না। জেলার ১৫/১৬ জন চামড়া ব্যবসায়ীর ট্যানারী মালিকদের কাছে বিগত ৪/৫ বছরের প্রায় তিন কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঋণ করে এবারেও চামড়া কিনেছে। কিন্তু চামড়ার দরপতন এবং বেশি দামে লবন ও মজুরী দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে পুঁজি ফিরে পাব কিনা সন্দেহ রয়েছে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সমিতির সভাপতি প্রকৌশল এসএম সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, এই চামড়া ছোট ব্যবসায়ীসহ চারবার হাতবদল হয়ে ট্যানারী মালিকদের কাছে পৌছে। প্রথমে মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রাম ঘুরে কোরবানি দাতার কাজ থেকে চামড়া কিনেন। দ্বিতীয় ধাপে পাইকাররা নগদ টাকা দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিকট কিনেন। তৃতীয় ধাপে আড়ৎদাররা লবন দিয়ে লাভের আশায় ঘরে কিছু দিন রাখেন। চতুর্থ ধাপে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর চামড়া গুলি ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। তবে শহর কিংবা গ্রামের পাড়া মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে লোকশান গুনতে হয় মৌসুমি ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

আর্কাইভ