এস.এম.রকি, খানসামা।। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: আবু নাছের এ নোটিশ প্রদান করেন।
সম্প্রতি নোটিশের এই চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
গত ৬ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক-১ এর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আবু নাছের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। ওইসব অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখা প্রদান করতে উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, তৎকালীন ইউএনও রাশিদা আক্তার ও উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (দিনাজপুর) মো: মোখলেছুর রহমান।
খানসামা উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাজ উদ্দিন চিঠি পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, এডিপি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ইউনিয়ন পরিষদের মতামত গ্রহণ না করার অভিযোগে গত ৩ জুলাই খানসামা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জিল আফরোজ পারভীনসহ ৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় এবং ডিডিএলজি বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠান ডিডিএলজি।
ব্যাখা চেয়ে পাঠানো নোটিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১২জুলাই খানসামা উপজেলা পরিষদের কার্যালয় সরেজমিনে তদন্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান।এই সময়ে তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান উল্লেখ করেন, প্রকল্প গ্রহণের সময় বিশেষ কারনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত না থাকার কারণে সভা পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) যা সঠিক হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ সভা পিছিয়ে দেওয়া যেত বলে মতামত দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয় এবং উপজেলা প্রকৌশলী সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা না করেই প্রকল্প গ্রহন করেন।
উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দের ৩০ শতাংশ পিআইসি এবং কোটেশনের মাধ্যমে একবারে ভৌত অবকাঠোমো নির্মাণের জন্য ১০ লক্ষ এবং বছরে মোট ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে পারবে। এতে সর্বশেষ বরাদ্দকৃত ৫০,০০,০০০/- (পঞ্চাশ লক্ষ) পুরোটাই পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্প ও বাস্তবায়ন সঠিক হয়নি, কারন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পূর্বেও পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এর ম্যানুয়ালের ২০ অনুচ্ছেদে (পৃষ্ঠা নং ৩৬) পিআইসি চেয়ারম্যান/সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত জন প্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে এবং উক্ত কমিটিকে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পগুলো ক্ষেত্রে তা গ্রহন করা হয়নি। পিআইসি কমিটির সদস্যদের কর্তৃক কাজ শুরুর ও শেষের সভা সংক্রান্ত কোন রেজুলেশন নথিতে পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চুড়ান্ত বিলের জন্য করা আবেদনে প্রকল্প কমিটির সভাপতি কর্তৃক স্বাক্ষর হয়নি অথচ এ আবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্পের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। নথিতে প্রকল্পের শুরুর ও শেষের ছবি না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রায় প্রকল্পের কাজই সমাপ্ত হয়নি অথচ পুরো বিল পরিশোধ করা হয়েছে, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে জানা যায়।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
ইউএনও রাশিদা আক্তার বর্তমানে নীলফামারী জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন। এব্যাপারে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তারের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা তদন্তাধীন রয়েছে। এই বিষয়ে কোন চিঠি পাইনি পেলে উত্তর দেওয়া হবে।
একাধিক মোবাইল নাম্বার থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন সাংবাদিকদের বলেন, টেন্ডারে প্রকল্প গ্রহণ করলে ভ্যাট/ট্যাক্সের টাকা চলে যায়। তাই পিআইসি মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তবে অনিয়ম ও নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করা হয়নি। কাজের প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করার কথাও তিনি জানান।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, গত মাসে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে ৩জনের কাছে ব্যাখা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। আমিও তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে অবগতি নোটিশ পেয়েছি।