গত শুক্রবার রাতে গোপনে সংবাদ পেয়ে ডিমলা উপজেলার মেডিনোভা ক্লিনিকে সরাসরি ওটি রুমে গিয়ে দেখা যায় রনজিৎ ও ওই ক্লিনিকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পরচয়দানকারী জাহাঙ্গীর আলম মিলে একজন রোগীর সিজার করছেন। সেখানে কোন বিশেষজ্ঞ অজ্ঞান ডাক্তার ও নার্স নেই।
রোগীর অভিভাবক জানান, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ যে ডাক্তারের কথা বলে রোগী ভর্তি করিয়েছেন, এখন শুনছি অন্য ডাক্তার সিজার করেছে। এটা এক ধরনের প্রতারনা।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে জানালে, তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ইউএনও বেলায়েত হোসেন অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটি সিলগালা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে মেডিনোভা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হর্ষবর্ধন জানান, রনজিৎ তার প্রতিষ্ঠানে সার্জনের সহকারী হিসেবে অপারেশনে অংশ নেন। তবে রনজিতের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তাহলে রোগীর সার্জারি করলো কে? এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন রনজিৎ উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিত কাজ করেন। তাই আমরাও কাজ করাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার জলঢাকা উপজেলার খেরকাটি গ্রামের বাসিন্দা রনজিৎ। খেরকাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। তারপর অফিস সহায়ক ও ওটি বয় হিসেবে ডোমারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করেন কয়েক বছর। বর্তমানে ডোমার সেভেন স্টারসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে মালিকানা রয়েছে তার।
জেলার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের পরিচালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ক্লিনিকে কখনও সার্জারি ডাক্তার, কখনো বা সহকারী সার্জন পরিচয়ে কাজ করছেন রনজিৎ। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাশ হলেও নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রও লিখে দেন। তার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন একাধিক রোগী। তার মধ্যে অন্যতম জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউপির সবুজপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী মেঘলা বেগম (২০)। এ ঘটনায় রবিউল ইসলাম ভুয়া সার্জারি ডাক্তার রনজিতকে আসামি করে ডোমার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী আদালতে চলমান।
এসব বিষয়ে রনজিৎ বলেন, ওটিবয় হিসেবে ডাক্তারদের সাথে কাজ করতে করতে সার্জারি করা শিখেছি। কোন ডাক্তার বা ক্লিনিক ডাকলে সহকারী হিসেবে কাজ করে দেই। আমার কোন ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই।
রনজিৎ এর বিষয়ে ডোমার ফ্রেন্ডস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক কমল দেবনাথ বলেন, রনজিৎ আমাদের ক্লিনিকে প্রথমে অফিস সহায়ক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে।
ডিমলা লাইফ কেয়ার হসপিটালের ওটিবয় ময়নুল বলেন, রনজিৎ আগে এখানে সার্জারি করতো। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তার ডাক্তারি কাগজপত্র নেই। এরপর থেকে তিনি আসেন না।
ওটি ইনচার্জ ও ওটি এসিস্ট্যান্টের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডোমার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা (গাইনি বিষয়ে অভিজ্ঞ) ডাঃ আইনুল হক জানান, একজন ওটি ইনচার্জকে কমপক্ষে ডিপ্লোমা নার্স হতে হবে এবং ওটিতে সার্জনের ফার্স্ট এসিস্ট্যান্ট হতে হলে অবশ্যই তাকে একজন ডাক্তার হতে হবে।
এবিষয়ে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান, কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির অপকর্মের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মেডিনোভা ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। সেই সাথে ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।